মানুষ তো বটেই, পশুপক্ষীরও নুন ছাড়া মোটেই চলে না। আমরা যার নুন খাই, তার গুণ গাওয়াটাও জরুরি বলে মনে করি – এ থেকেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে নুন কতটা জরুরি? কিন্তু নুন মোটেই একরকম হয় না এবং প্রতিটি কাজও করে ভিন্নভাবে। বিশেষ বিশেষ শারীরিক সমস্যার জন্য বিশেষ নুন বাছাইয়ের পরামর্শও দেওয়া হয়।
সাধারণ নুন: সাধারণ নুন বা টেবল সল্ট দেখতে সাদা ধবধবে এবং আমাদের রোজের খাদ্যতালিকায় এই নুনটিই থাকে। প্রাথমিকভাবে সমুদ্র থেকে সংগৃহীত হয় এবং প্যাকেটবন্দি করার আগে নানা পরিশোধনের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে তা জরুরি ও উপকারি খনিজ হারায়। তাছাড়াও নুন মিহি রাখা ও জমাট না বাঁধার জন্য মেশানো হয় নানা রাসায়নিক। আয়োডিনের ঘাটতি মেটাতে অধিকাংশ সাধারণ নুনেই তা যোগ করা হয়। ফলে যাঁদের হাইপোথাইরয়েডের মতো সমস্যা আছে, তাঁরা বিপদে পড়েন। হাই ব্লাড প্রেশার বা কিডনির সমস্যা থাকলেও নুন খাওয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কোশের সল্ট: বিদেশি চ্যানেলে রান্নার শো দেখার অভ্যেস আছে? তা হলে নিশ্চয়ই কোশের সল্ট নামটির সঙ্গে পরিচিত আপনি? দানাদার এই নুন মাছ বা মাংসের পদ বা ভাজাভুজির উপর দিয়ে ছড়িয়ে দিলে খাবারের স্বাদ বেড়ে যায় বহুগুণ। কিন্তু কোশের সল্টে বাড়তি আয়োডিন মিলবে না, তা বেশিদিন ফেলে রেখে ব্যবহার করলে জমাট বাঁধারও আশঙ্কা আছে। তবে কোশের সল্ট কেনার সময় ভালো ব্র্যান্ড দেখে কেনা উচিত। তা না হলেই ঠকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
হিমালয়ান পিঙ্ক সল্ট: বলা হয়, সারা পৃথিবীতে যত ধরনের নুন মেলে, তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে হিমালয়ের গোলাপি নুন। পাকিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের কোথাও কোথাও এই নুন হাতে তৈরি করা হয়। মিনারেলের কারণেই নুনের গায়ে চমৎকার রং ধরে। রান্নায় এবং রান্নার শেষে ফিনিশিং সল্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন এই বিশেষ নুনটি। মনে রাখবেন, এই প্রাকৃতিক নুনের স্বাদ অন্য নুনের চেয়ে বেশি তীব্র।
গ্রে সল্ট: ফ্রান্সে পাওয়া যায়। জোয়ারের সময় সমুদ্রের জল যে সব অগভীর জলাশয়ে ঢুকে পড়ে, তারই একেবারে নিচের স্তরে জমা হতে থাকে এই নুন। নুন জমতে জমতে পুরু স্তর তৈরি হয় এবং জল সরে গেলে আবার সেই স্তর থেকেই নুন তোলা হয়। এই নুনের রং কালচে, খুব মিহি বা ফুরফুরেও হয় না গ্রে সল্ট।
সি সল্ট বা সৈন্ধব লবণ: সমুদ্রের জল বাষ্পীভূত করে তৈরি করা হয় এই নুন। দানাদার এই নুনের তেজ টেবল সল্টের চেয়ে বেশি হয়। রান্নায়, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বা ব্যথা কমানোর জন্য গরম সেঁক দেওয়ার সময় ব্যবহার হয়।
বিটনুন বা ব্ল্যাক সল্ট: মূলত হিমালয় থেকে সংগৃহীত নুন, তবে কয়লা, কিছু জড়ি-বুটি, বিশেষ বিশেষ গাছের বাকল ইত্যাদিসহ ফারনেসের মধ্যে রাখা হয় 24 ঘণ্টার জন্য। তার ফলে তীব্র সালফারাস গন্ধ তৈরি হয়। খাবার বা শরবতের স্বাদ বাড়িয়ে তুলতে এই নুনের জুড়ি নেই, হজমের জন্যও সহায়ক।
হাওয়াইয়ান সল্ট: না, এই নুনের উৎস সমুদ্র নয়, বরং হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের আগ্নেয়গিরি! দানাদার, তীব্র স্বাদ ও গন্ধের হাওয়াইয়ান সল্ট দু’ ধরনের হয় – কালো ও গোলাপি।
লবন এবং জল। মানবদেহে অত্যন্ত জরুরি দু’টি উপাদান। কিন্তু তা পরিমিত মাত্রায় হলে তবেই স্বাস্থ্যসম্মত হয়। আমরা সাধারণত খাবারে বা রান্নার সময় যে নুন ব্যবহার করি তা পরিশ্রুত নুন। অর্থাত্ প্রায় বিশুদ্ধ সোডিয়াম ক্লোরাইড। প্রাকৃতিক নুন থেকে সমস্ত মিনারেল ছেঁটে ফেলে দেওয়া হয় এই প্রক্রিয়ায়। অথচ এই প্রাকৃতিক মিনারেল আমাদের শরীরের পক্ষে অত্যন্ত দরকারি।
তা হলে কী ভাবে আমরা ঘাটতি পূরণ করব? উত্তর একটাই। প্রাকৃতিক লবন থেকেই একমাত্র এই মিনারেল সংগ্রহ করে। হিমালয়ান সল্ট এর জন্য বিশেষভাবে সমাদৃত। শুধু এ দেশেই নয়, বিদেশেও বহু মানুষ এই নুন মিশ্রিত জল খেয়ে উপকার পেয়েছেন এবং পাচ্ছেন। সকালে খালিপেটে এই জলের উপকারিতা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু এটা বানানোর একটা পদ্ধতি রয়েছে। দেখে নিন কী ভাবে বানাবেন এই লবন-জল।
• একটি পরিষ্কার কাঁচের জারে ফোটানো ঠান্ডা করা জল নিন।
• এ বার তাতে বেশ খানিকটা হিমালয়ান লবন ঢেলে দিন। ২৪ ঘণ্টা রেখে দিন।
• যখন দেখবেন আর লবন জলে দ্রবীভূত হচ্ছে না তখন বুঝবেন আপনার সলিউশনটি প্রাথমিকভাবে তৈরি হয়েছে।
• পড়ে থাকা লবন ছেঁকে লবন-জল ভরা জারটি ফ্রিজে রেখে দিন।
প্রতি দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালিপেটে জার থেকে এক চামচ জল নিয়ে তা এক গ্লাস পরিষ্কার জলে মেশান। এই জল ‘SOLE’ (সোলে) নামে পরিচিত। এক উপকারিতা জানলে অবাক হতে হয়।
১) শরীরে জলের মাত্রা বজায় রাখে।
২) কোষে PH মাত্রা বজায় রাখে।
৩) রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৪) শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর করে।
৫) সাইনাসের সমস্যা কমিয়ে দেয়।
৬) মাসল ক্র্যাম্প কমায়।
৭) শরীরে বিভিন্ন জয়েন্ট বা গাঁট-কে সুস্থ রাখে।
৮) হাঁড় ভালো রাখে।
৯) ঘুম ভালো হয়।
১০) হজমশক্তি বাড়ে।
১১) যৌন ক্ষমতা বাড়ায়।
১২) মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।
১৩) বলিরেখা কমায়।
১৪) শরীর থেকে টক্সিন বার করে।
১৫) এনার্জিতে ভরপুর রাখে।